পেকুয়ায় এক কাঠুরিয়ার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বটতলি জুমপাড়া দুর্গম পাহাড়ি হাতিরঢেরা নামক স্থান থেকে লাশটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় দু’ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। বটতলি জুমপাড়ার বাসিন্দারা জানান ওই স্থানে রক্তাক্ত কাঠুরিয়ার লাশ পড়ে থাকে। তার মুখমন্ডল তেথলে গেছে। মাথার একপাশে খুলি উপড়ে গেছে। অনেকটা বিভৎস হওয়ায় লাশটির নমুনা বিকৃত হয়ে গেছে। নিহত কাঠুরিয়ার নাম রমজান আলী (৪০)। তিনি জুমপাড়া এলাকার আনুমিয়ার ছেলে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) মঞ্জুরুল কাদের মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মরদেহ গতকাল সকালে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করে।
ওই ঘটনায় এলাকায় হৃদয় বিদরক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা গেছে। স্থানীয়রা জানান নিহত রমজান আলী শান্ত স্বভারের লোক। তার সাথে এলাকায় কারো বিরোধ নেই। তবে জীবিকার তাগিদে ওইদিন সামাজিক বাগানে যান। রাতে একটি সাটাই করা গাছ নিয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন। ওই স্থানে তার মৃত্যু হয়। জুমপাড়ার লোকজন জানান পাহাড়ে সৃজিত সামাজিক বনায়নের নিরাপত্তা জোরদার করতে বাঁশখালীর পুঁইছড়ি বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয় তৎপর হয়েছেন। ইতিপুর্বে গাছ লুট থামাতে তারা প্রতিরাতে স্বসস্ত্র পাহারা জোরদার করে। ওইদিন রাতে ১০টার দিকে বনবিট কর্মকর্তা কার্যালয় ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের নিকটতম স্থানে অন্তত ৫-৬রাউন্ড গুলির বিকট শব্দ হয়েছে। লাশ উদ্ধারের পর টইটংয়ের পাশ^বর্তী বাশঁখালী পুঁইছড়ির বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিঃস্তব্ধ অবস্থা বিরাজ করছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে পুঁইছড়ি বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয়ে পরিদর্শন করা হয়। কিন্তু ওই অফিসে তালা ঝুলে থাকায় এ সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে কারো সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে রমজান আলীর লাশ উদ্ধারের পর পুঁইছড়ি বনবিট কর্মকর্তার কার্যালয়ে অচল অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ খবর এলাকায় জানা জানি হলে বিট কর্মকর্তার কার্যালয়ের সব কর্মচারী গা ঢাকা দিয়েছে। তারা অনেকটা বিমুঢ ও বিচলিত হয়েছেন বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন। রমজান আলী গত ৪-৫দিন আগে চট্টগ্রাম শহর থেকে বাড়িতে আসেন। তিনি কিছুদিন আগে চট্টগ্রামে ভাড়ায় টমটম চালাতেন। আগে থেকে তিনি জীবিকার জন্য পাহাড়ে গিয়ে লাকড়ি কুড়াতেন। তিনি এক সন্তানের জনক। স্থানীয়রা জানান রমজান আলীর মৃত্যুকে ঘিরে দু’ধরনের মন্তব্য করা যাচ্ছে। একটি কারন হচ্ছে সাটাই গাছের ধাক্কায় তার প্রান বিনাশ হয়েছে। অপরটি হচ্ছে বনবিট অফিসের লোকজন গাছ চুরির দায়ে তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। লাশটি উদ্ধারের সময় সাটাই করা ৭-৮ফুট লম্বা একটি গাছ, একটি মোবাইল, একটি কারাত ও একজোড়া সেন্ডেল উদ্ধার করে পুলিশ। টইটং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল কাসেম জানায় খবর পেয়ে আমরা ওই স্থানে যাই। পুলিশকে অবহিত করেছি। রাতে হাতিরঢেরায় গুলির আওয়াজ শুনেছি। রমজান আলীর সাথে এলাকায় কারো বিরোধ নেই। তবে বনবিটকে নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। রমজান আলীর স্ত্রী খুর্শিদা বেগম জানায় খাওয়া-দাওয়া সেরে রাতে বাড়ি থেকে বের হন আমার স্বামী। এরপর রাতে তার লাশ পাওয়া যায়। আমি গুলির আওয়াজ শুনেছি। স্বামীকে বিট অফিসে ধরে নিয়ে গেছে এ সংবাদ আমি পেয়েছি। আমার স্বামীকে হত্যা করেছে তারা। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে গাছ চাপা পড়ে মারা গেছে বলে অপপ্রচার চালায়। দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে বাঁশখালীর পুঁইছড়ি বনবিট কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম শাহিনের সাথে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি বলেন লাশ উদ্ধারের বিষয়টি শুনেছি। আমার কোন লোকজন রাতে পাহারা দিতে বনে যাননি। গুলিও হয়নি বনায়নে। আমি ওইদিন অফিসে ছিলামনা। জলদিতে রেঞ্জ কর্মকর্তা স্যারের সাথে ছিলাম। আমার অফিস তালাবদ্ধ নেই। সারা দিন কাজ করেছি। পেকুয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ (তদন্ত) মনজুরুল কাদের মজুমদার জানায় লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত চলছে। এখনো ষ্পষ্ট কিছু বলা যাচ্ছেনা। রির্পোট আসুক।
পাঠকের মতামত: